অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী স্বর্ণা বিশ্বাসকে (১৮) কু-প্রস্তাব দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে দুই সহযোগীকে নিয়ে ব্যবসায়ী বন্ধুকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে রাখা হয়। বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নিহতের পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করা হয়েছিলো।
অবশেষে নিখোঁজের পর হত্যাকান্ডের আটদিন পর তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার মূলরহস্য উদ্ঘাটনসহ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে বরিশাল র্যাব-৮ এর সদস্যরা। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকারীরা র্যাবের কাছে লোকহর্ষক এ ঘটনার বর্ননা করেছেন।
শনিবার দুপুরে নগরীর রূপাতলীস্থ র্যাব-৮ এর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৮ বরিশালের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান। লিখিত বক্তব্যে গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, অপহরণের পর হত্যাকরে লাশ বস্তাবন্দি করে রাখা ব্যবসায়ী শাহিন মোল্লা (৩৮) নগরীর ২৫ নং ওয়ার্ডের রূপাতলী এলাকার এমএ খালেক সড়কের বাসিন্দা এমদাদুল হক মোল্লার ছেলে। অপরদিকে শুক্রবার দিবাগত রাতে র্যাব-৮ এর সিপিএসসি সিনিয়র এডি মো. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারকৃত তিন হত্যাকারী হলো-বরগুনার আমতলী থানার কালীপোড়া গ্রামের রুহুল আমিন মোল্লার ছেলে ইউসুফ মোল্লা, পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানার গন্ডামারি গ্রামের রকিবুল ইসলামের ছেলে নাজমুল ইসলাম অমি ও বানারীপাড়ার সোনাহার গ্রামের মিজান শিকদারের ছেলে হামিম শিকদার। তাদের মহানগরীর এয়ারপোর্ট থানাধীন পশ্চিম ইছাকাঠি, কাশিপুর ও বাকেরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, একই এলাকায় বসবাসের কারণে ব্যবসায়ী শাহিন মোল্লার সাথে আসামী ইউসুফ মোল্লার বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে শাহীন মোল্লা আসামী ইউসুফ মোল্লার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী স্বর্ণা বিশ্বাসকে কু-প্রস্তাব দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ইউসুফ মোল্লা ভিকটিম শাহিন মোল্লার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক ইউসুফ তার বন্ধু গ্রেফতারকৃত অপর দুই আসামী নাজমুল ইসলাম অমি ও হামিম শিকদারকে নিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি রাত নয়টার দিকে কৌশলে শাহীনকে ডেকে নিয়ে যায়। রূপাতলীস্থ কাঠালতলার তালুকদার হাউজিংয়ের প্রথম গলির নাহার ভিলার চতুর্থ তলায় ইউসুফ মোল্লার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসামীরা পরস্পরযোগসাজসে শাহীন মোল্লার গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে শাহীনের লাশ বস্তাবন্দি করে গুম করার জন্য বাথরুমের ফলস্ ছাদের উপরে রেখে ফলস্ ছাদের দরজা আঠা দিয়ে বন্ধ করে দেয়।
সূত্রমতে, ব্যবসায়ী শাহীন মোল্লার নিখোঁজের ঘটনায় গত ৩০ জানুয়ারি বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় তার স্বজনরা একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। পাশাপাশি গত ৩১ জানুয়ারি শাহীনের বোন শিরিন আক্তার মুন্নি তার নিখোঁজ ভাইয়ের সন্ধান পেতে র্যাব-৮’র সহযোগীতা চেয়ে একটি আবেদন করেন। এরইমধ্যে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে গত ২ ফেব্রুয়ারী আসামীরা শাহীনের পরিবারের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এমতাবস্থায় র্যাব-৮’র সদস্যরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামীদের অবস্থান সনাক্ত করে শুক্রবার দিবাগত রাতভর অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারের মাধ্যমে মূলরহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হন। পাশাপাশি বস্তাবন্দি করে গুম করে রাখা ব্যবসায়ী শাহীন মোল্লার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
Leave a Reply